বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে উড়ন্ত শুরুর পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ। তাতে প্রথম দুই ম্যাচের মধ্যে মুদ্রার দুই পিঠই দেখা হয়ে গেছে সাকিব আল হাসানদের। ইংলিশদের বিপক্ষে হতাশাজনক পারফরম্যান্স ভুলে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর মিশনে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। আজ শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) এম এ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে দুপুর আড়াইটায় শুরু দুই দলের লড়াই। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন ও টি-স্পোর্টস।
ইংলিশদের
বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারলেও
সতীর্থদের মনোবল ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কেননা
টুর্নামন্টের মাত্র শুরু। প্রাথমিক রাউন্ডে দুটি ম্যাচ খেলেছে। বাংলাদেশকে খেলতে হবে আরও সাতটি ম্যাচ। এমন অবস্থায় ইংলিশদের বিপক্ষে হারের হতাশা নিয়ে পড়ে থাকার খুব বেশি সুযোগ নেই। দলনেতা সাকিব কিউইদের বিপক্ষে নতুন ম্যাচে, নতুন দিনে ভালো কিছু করার প্রত্যয় সতীর্থদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
সাকিবের
সুরে সুর মিলিয়ে সহ-অধিনায়ক নাজমুল
হোসেন শান্তও ভুলে যেতে চাইছেন সেসব। অতীত ভুলে নতুন ম্যাচের দিকে তাকিয়ে তিনি, ‘আমার মনে হয় টুর্নামেন্টে আমরা
ভালো শুরু করেছি। সত্যি বলতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো খেলতে পারিনি, যেটা নিয়ে এতো বেশি চিন্তিতও না। সামনের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছি। আশা করি, ভালো একটা ম্যাচ খেলতে পারবো।’
যদিও
টানা দুই ম্যাচ জিতে ফুরফুরে মেজাজে থাকা কিউইদের বিপক্ষে কাজটা মোটেও সহজ হবে না। সেটা সাকিব-মুশফিকরা খুব ভালো করেই জানেন। অতীত পরিসংখ্যানও বাংলাদেশের বিপক্ষে। বিশ্বকাপের পাঁচ দেখায় প্রতিবারই হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায় ১৯৯৯ সালে। ওই সময় থেকে
২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ছয় আসরের পাঁচবারই
কিউইদের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছে। বাংলাদেশের ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপে কেবল দুই দলকে মুখোমুখি হতে হয়নি।
চেমসফোর্ডে
১৯৯৯ বিশ্বকাপে প্রথম লড়াইয়ে বাংলাদেশ ১১৬ রানে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল। কিম্বারলিতে ২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ১৯৮ রানের বেশি করতে পারেনি। প্রথম দুই বিশ্বকাপের মতো ব্যাটিং বিপর্যয়ে ছিল ২০০৭ বিশ্বকাপেও। এবার অলআউট ১৭৪ রানে। হ্যামিল্টনে কিউইদের মাঠে ২০১৫ বিশ্বকাপে চতুর্থবারের মতো মুখোমুখি হয় দুই দল।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহ এবারকার লড়াইটা জমিয়ে তুলেছিলেন। বাংলাদেশ ২৮৮ করলেও সাত বল আগে জয়
তুলে নেয় কিউইরা। গত বিশ্বকাপে ২৪৪
রান করেও দেখে পঞ্চম হার। ষষ্ঠ দেখায় হারের বৃত্ত ভেঙে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয়টা কি পাবেন সাকিবরা?
অতীত
পরিসংখ্যান বাংলাদেশকে সাহস জোগাতে না পারলেও চেন্নাইরে
ভেন্যু ঠিকই বাংলাদেশকে আশাবাদী করে তুলছে। ভারতের সবচেয়ে স্পিন বান্ধব উইকেট ধরা হয় চেন্নাইয়ের চিদম্বরম
স্টেডিয়ামটিকে। মিরপুরের সঙ্গে এই মাঠের কিছুটা
মিল আছে। মহেন্দ্র সিং ধোনির স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত এম এ চিদম্বরম
স্পিনারদের স্বর্গরাজ্য। ফলে প্রতিপক্ষ হিসেবে শক্তিশালী নিউজিল্যান্ড হলেও কন্ডিশনের চেনা আবহ বাংলাদেশকে সাহসী করে তুলছে।
চেন্নাইয়ের
উইকেটে পেসারদের আধিপত্যও কম নয়। তবে
স্পিন সহায়ক উইকেট বলেই স্পিনারদের নিয়ে আলোচনাটা বেশি হচ্ছে। দুই দলেই রয়েছে বিশ্বমানের স্পিনার। একপাশে সাকিব আল হাসান তো
আরেকপাশে মিচেল স্যান্টনার। একপাশে মেহেদী হাসান মিরাজ ও আরেকপাশে রাচিন
রবীন্দ্র। আছেন শেখ মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ ও গ্লেন ফিলিপস,
মার্ক চ্যাপম্যান। দুই দলের স্পিনারদের লড়াইটা যে সমানে সমানে
হবে-বোঝাই যাচ্ছে।
নিউজিল্যান্ডের
অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলন এসে জানিয়েছেন, ‘প্রতিটি ম্যাচের মতো কালও (শুক্রবার) বিশাল চ্যালেঞ্জ। এই টুর্নামেন্টে যে
কেউ যে কাউকে হারাতে
পারে। এটাই সবচেয়ে রোমাঞ্চকর। কন্ডিশন সব সময় বদল
হচ্ছে, একটা ভেন্যু থেকে আরেকটা ভেন্যুতে যেতে অনেক কিছু বদল হচ্ছে। এখানে হয়ত স্পিন উইকেট থাকবে। কিন্তু আমার মনে হয় দুই দলেরই
ভালো স্পিনার আছে। স্পিনাররা বড় ভূমিকা রাখবে
কাল (শুক্রবার)।’
চেন্নাইয়ের
এই মাঠে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার একটি
ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই ম্যাচেও দেখা
গেছে স্পিনারদের আধিপত্য। ভারতের স্পিন বিষে নীল হয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা আত্মসমর্পণ করেছে। কুলদীপ যাদব, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা
মিলে ৬ উইকেট নিয়েছেন।
যদিও শেষ পাঁচ ওয়ানডেতে এখানে পেসাররাই দাপট দেখিয়েছে। ১০ ইনিংসে ৭৬
উইকেটের মধ্যে পেসাররা নিয়েছেন ৪৬টি। আর স্পিনারদের ঝুলিতে
গেছে ২৭ উইকেট। বাংলাদেশ
দল ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ থেকেই এখন ধারণা নিচ্ছে।
গতকাল
দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন সহ-অধিনায়ক নাজমুল
হোসেন শান্ত। স্পিনারদের নিয়ে তার উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো, ‘আমরা এর আগে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দেখেছি। উইকেটটা স্পিন নির্ভর ছিল। মনে হয় আমাদের স্পিনারদের
অনেক সাহায্য করবে এই উইকেট। তার
পরেও উইকেট নিয়ে খুব বেশি ভাবছি না। পরিকল্পনাগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। কী করতে হবে
সেই সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।’
নিউজিল্যান্ডকে
আটকাতে স্পিন নির্ভর একাদশ সাজানো হতে পারে। একাদশে এক পেসারকে কমিয়ে
খেলানো হতে পারে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে। সেক্ষেত্রে বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজকে বিশ্রামে থাকতে হতে পারে। ওপেনিংয়ে আসতে পারে পরিবর্তন। মেহেদী হাসান মিরাজ কিংবা নাজমুল হোসেন শান্তকে দিয়ে ওপেনিংয়ে লিটনের সঙ্গী হিসেবে পাঠানো হতে পারে। সেক্ষেত্রে তানজিদ হাসান তামিমকে বাদ দিয়ে ফেরানো হতে পারে মাহমুদউল্লাহকে।
সুত্র:
বাংলা ট্রিবিউন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন