ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ থেকে ভারত স্বাধীন হওয়ার পাঁচ বছর পর ১৯৫২ সালের অক্টোবর, রক্তক্ষয়ী এক অধ্যায়ের তরতাজা ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে সেদিন লাহোর থেকে অমৃতসরে গিয়েছিল পাকিস্তানের ক্রিকেট দল। পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর প্রথমবার টেস্ট সিরিজ খেলতে তারা পা রেখেছিল নতুন ভারত প্রজাতন্ত্রে। তারপর থেকে শুরু, ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুই দেশের বৈরিতা জমিয়ে তুলেছে তাদের ক্রিকেট লড়াই। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা মানেই ভারত ও পাকিস্তানের ব্যাট-বলের লড়াই। ২২ গজে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দুই দল নামছে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
দুই
দেশের মুখোমুখি লড়াই উত্তেজনাপূর্ণ আর আকাঙ্ক্ষিত হওয়ার
অন্যতম কারণ কালেভদ্রে একসঙ্গে মাঠে দেখা যায় তাদের। ২০১৬ সালের পর থেকে কোনও
দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেনি তারা। কেবল আইসিসি ও এশিয়া কাপের
ইভেন্ট হলেই ভারত-পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখার অপেক্ষা ফুরোয়। আজ শনিবার আরেকবার
অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায় মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল।
এবারের
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ম্যাচ অন্য আরেকটি কারণে বিপুল পরিমাণে দর্শক চাহিদা বাড়িয়েছে। সাত বছরে প্রথমবার ভারতের মাটিতে হচ্ছে দুই দলের ক্রিকেট যুদ্ধ। ভক্ত-সমর্থকদের চোখের পিপাসা মেটাতে তাই নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখের বেশি
আসনবিশিষ্ট নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম। গত কদিন ধরে
হোটেলগুলোতে বেড়ে গেছে মানুষের আনাগোনা। এই ম্যাচ ঘিরে
উত্তেজনার আরেকটি উদাহরণ, আহমেদাবাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ‘মিছে অসুস্থতার’ কথা বলে বুকিং দিয়ে রাখা হচ্ছে।
বিসিসিআই
কিন্তু হাইভোল্টেজ এই ম্যাচ সরাসরি
স্টেডিয়ামে বসে দেখার জন্য সব ব্যবস্থা করে
রেখেছে। গত কয়েক দিন
স্টেডিয়ামের গ্যালারির শূন্যতা হাহাকার তৈরি করেছিল। এবার উল্টো দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় আয়োজকরা।
এ
তো গেলো মাঠের বাইরের আবহ। মাঠের ভেতরে তুমুল লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে রোহিত শর্মা ও বাবর আজমরা।
দুই দলই এখন পর্যন্ত অপরাজিত চার দলের দুটি। সম্প্রতি ভারত অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে
জিতে দারুণ ফর্মে। আর পাকিস্তান সবশেষ
ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপের রেকর্ড রান তাড়া করে জিতে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে।
এই
ম্যাচে ভারতকে উজ্জীবিত করে রাখছে শুবমান গিলের ফেরার ৯৯ শতাংশ সম্ভাবনা।
দুই ম্যাচেই ছিল স্পিনারদের দাপট। পাকিস্তানি ব্যাটারদেরও পরীক্ষা নিতে বল ঘুরাবেন রবীন্দ্র
জাদেজা ও কুলদীপ যাদবরা।
অন্যদিকে পাকিস্তানের বোলিংয়ে মূল শক্তি শাহীন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলী ও হারিস রউফের
পেস আক্রমণ।
গত
কয়েক বছরের মতো এবারও হবে ভারতের ব্যাটিংয়ের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বোলিংয়ের লড়াই। সবশেষ এশিয়া কাপে দুই দলের সুপার ফোরের ম্যাচে জয় হয়েছিল ভারতের
ব্যাটিং শক্তির। এবার ভিন্ন কিছু হবে নাকি, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
বিশ্বকাপে
এনিয়ে দুই দলের দেখা হচ্ছে অষ্টমবারের মতো। আগের সাতবারের লড়াইয়ে ভারত ৭-০ তে
এককভাবে এগিয়ে। যদিও ওয়ানডের হেড টু হেডে পাকিস্তান
৭৩-৫৬ তে সামনে।
বিশ্বমঞ্চে পরিসংখ্যান পক্ষে না হলেও তা
আমলে নিচ্ছেন না পাকিস্তানি অধিনায়ক
বাবর আজম, ‘অতীতে কী ঘটেছিল সেসবে
আমি ওত বেশি মনোযোগ
দেই না। সামনে কী, সেদিকে মনোযোগ আমার। এই রেকর্ডগুলো তৈরি
হয় ভাঙার জন্য এবং আমরা ভেঙে ফেলতে চেষ্টা করবো।’
২০১১
সালের পর বিশ্বকাপে প্রথমবার
ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে লড়বে ভারত। সেবার মোহালিতে সেমিফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে উৎসবে মেতেছিল তারা। আরেকবার ঘরের দর্শকদের উৎসবের উপলক্ষ এনে দিতে চান রোহিত। এক লাখ ৩২
হাজার দর্শকের সামনে খেলার চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বিশাল দর্শকগোষ্ঠীর সামনে খেলে আমাদের ছেলেরা অভ্যস্ত। এটা কেবল আপনার পক্ষে কাজ করে, বিপক্ষে নয়। দলের অনেকে দর্শকদের উল্লাস, তাদের চিৎকার ভালোবাসে। ছেলেরা সত্যিই এই ব্যাপারটা উপভোগ
করে।’
সুত্র:
বাংলা ট্রিবিউন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন