শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে দক্ষিণ আফ্রিকা। শনিবার দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচটি। দশ দলের বিশ্বকাপে ফেভারিটের তালিকায় নেই দুই দল।
তবে
এদের কখনোই আবার হিসাবের বাইরে রাখাও যায় না। ‘চোকার’ তিলক কপালে জোটা প্রোটিয়ারা বিশ্বকাপের মঞ্চে একটা পর্যায় পর্যন্ত অসাধারণভাবে বিস্ফোরিত হয় প্রতি বিশ্বকাপেই।
তবে সেমিফাইনাল মঞ্চে গেলেই থমকে যায় স্বপ্নযাত্রা।
এমনটা
তাদের সঙ্গে ঘটেছে চারবার। তা ছাড়া সাম্প্রতিক
বছরগুলোতে ওয়ানডে ফরম্যাটে খুব ভালো অবস্থানে ছিল না দলটি। তাই
তাদের ঘিরে প্রত্যাশাটা আকাশছোঁয়া নয়। যদিও বিশ্বকাপের আগে নিজেদের মাঠে ৫ ম্যাচ সিরিজে
বিশ্বকাপের অলটাইম ফেভারিট অস্ট্রেলিয়াকে ৩-২-এ
হারানোর আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভারতে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
শ্রীলঙ্কারও
সঙ্গী নিকট অতীত। তারা পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানকে পেছনে ফেলে খেলেছে এশিয়া কাপের ফাইনাল। যদিও ঘরের মাঠে ভারতের কাছে ফাইনালে লজ্জা পেতে হয়েছিল। আগে ব্যাট করে মাত্র ৫০ রানে (ওয়ানডেতে
নিজেদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহ) গুটিয়ে যায় লঙ্কানদের ইনিংস; যা বিনা উইকেটে
টপকে এশিয়া কাপ নিজেদের করে নেয় ভারত। বিশ^কাপ অভিযান শুরুর আগে দুই শিবিরেই আছে চোট নিয়ে দুর্ভাবনা। প্রোটিয়াদের বোলিং ইউনিটের নিয়মিত মুখ আনরিখ নরকিয়া ও সিসান্দা মাগালাকে
চোটের কারণে দেশে রেখে আসতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। শ্রীলঙ্কাকে ভোগাবে পেস সেনসেশন দুশমন্থ চামিরা ও যাদুকরি স্পিনার
ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার চোট।
বিশ^কাপের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোও দুই দলকে খুব ভালো বার্তা দেয়নি। আফগানিস্তানের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচটি হতে দেয়নি বৃষ্টি। আর দ্বিতীয়টিতে নিউজিল্যান্ডের
কাছে বৃষ্টি আইনে হেরেছে ৭ রানে। শ্রীলঙ্কা
তাদের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেই হেরেছে। প্রথমটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে হার ৭ উইকেটে। গৌহাটিতে
২৬৩ করেও জয়ের মুখ দেখেনি তারা। আর দ্বিতীয় ম্যাচে
আফগানদের ২৯৪ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েও বৃষ্টি আইনে হেরেছে ৬ উইকেটে। এশিয়া
কাপ ফাইনালের লজ্জার পর প্রস্তুতি ম্যাচে
জোড়া হার ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী শ্রীলঙ্কার আত্মবিশ্বাসে জোর ধাক্কা দিয়েছে।
সেই
ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে আজ প্রোটিয়াদের পেছনে
ফেলতে হবে বাছাইপর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে। সে ক্ষেত্রে দলের
মূল ক্রিকেটারদের নিতে হবে দায়িত্ব। উইকেট কিপার ব্যাটার কুশল মেন্ডিসে বড় নির্ভরতা শ্রীলঙ্কার।
এশিয়া কাপে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ও আসরের দ্বিতীয়
সর্বোচ্চ ২৭০ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ার্মআপ ম্যাচে ৮৭ বলে ১৫৮
রানের ইনিংস থেকেও কুড়িয়ে নিয়েছেন আত্মবিশ্বাস। ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেটে মেন্ডিস নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে। ১১২ ওয়ানডেতে ২ সেঞ্চুরি ও
২৫ হাফ সেঞ্চুরিতে ১২৭০ রান করে ২৮ বছর বয়সী
ওপেনার শ্রীলঙ্কা দলের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ। এ ছাড়া পাথুম
নিশাঙ্কার চলতি বছরের ধারাবাহিক ফর্মটা বিশ্বকাপে নিয়ে আসা ভীষণ প্রয়োজন। চলতি বছর ২০ ম্যাচে ৮১৯
রানে সাহস দেখাচ্ছেন তিনিও। চামারা ও হাসারাঙ্গার অনুপস্থিতিতে
শ্রীলঙ্কার বোলিং ইউনিটকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে অফ স্পিনার মাহিশ
থিকসানাকে। ২৩ বছর বয়সী
স্পিনারের বড় বৈশিষ্ট্য ইনিংসের
যেকোনো সময় বল করার ক্ষমতা
আছে তার। চলতি বছর ১৫ ওয়ানডেতে নিয়েছেন
৩১ উইকেট। হ্যামস্ট্রিং চোট থেকে ফিরে থিকসানা কতটা ভীতি ছড়াতে পারবেন, সেটাই বড় প্রশ্ন। এ
ছাড়া পেস ইউনিটে মাথিসা পাথিরানা ও লাহিরু কুমারার
ওপর রাখতে হচ্ছে আস্থা।
প্রোটিয়াদের
চোকার দুর্নাম ঘোচাতে ব্যাট হাতে সাম্প্রতিক ফর্মকে বিশ্বকাপে টেনে আনতে হবে ২৯ বছর বয়সী
এইডেন মার্করামকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোম সিরিজ জয়ে বড় ভূমিকা ছিল
তার। দলের হয়ে সেই সিরিজে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২৫ রান এসেছে এই অভিজ্ঞ ওপেনারের
ব্যাট থেকে। সিরিজ নির্ধারিত শেষ ম্যাচে ৮৭ বলে ৯৩
রানের কার্যকর ইনিংস খেলেন। এ ছাড়া উইকেট
কিপার-ব্যাটার হেররিক ক্লাসেনও স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রোটিয়াদের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে ২৪৩ রান করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে মাত্র ৮৩ বলে ১৩
ছয়, ১৩ চারে সাজানো
১৭৪ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস।
তা ছাড়া চলতি বছর অধিনায়ক তেম্বা বাভুমাও ব্যাট হাতে রয়েছেন ছন্দে। ক্যারিয়ারের পাঁচ শতকের তিনটিই তিনি পেয়েছেন ২০২৩-এ। প্রোটিয়াদের বোলিং
ইউনিটে বড় শক্তি জোরে
বলের জুটি কাসিগো রাবাদা ও লুঙ্গি এনগিদি।
এ ছাড়া বাঁহাতি পেসার মার্কো জেনসেনও আছেন ছন্দে। ফলে অ্যানরিক নর্টজের না থাকাটা খুব
সমস্যা হবে বলে মনে হচ্ছে না।
বিশ্বকাপের
আগে দুই দলের সময়ই প্রায় একইভাবে কেটেছে মন্দে-ভালোয়। তারপরও আজকের ম্যাচে প্রোটিয়ারা খানিকটা এগিয়ে থাকবে। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পিছিয়ে পড়ে ৩-২-এ
সিরিজ জয়টাই তাদের পালে দিচ্ছে আত্মবিশ্বাসের হাওয়া।
সুত্র:
দেশ রূপান্তর
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন