শুরু থেকেই ওয়ানডে বিশ্বকাপের আমেজ খুব একটা পাওয়া যাচ্ছিল না। কোথায় যেন একটা ঘাটতি ছিল বলে মনে হচ্ছিল। এ ছাড়া এবারের বিশ্বকাপের শুরুটাও হয়েছে নানান জটিলতায়। টুর্নামেন্ট শুরুর পর দেখা গেছে গ্যালারিতে দর্শক খরা। অথচ, ভারতে ক্রিকেট অনেকটা ‘ধর্মের’ মতো।
দর্শক–সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ানোর কাজটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় আফগানিস্তান করেছে। এবারের টুর্নামেন্টে প্রথম অঘটন ঘটিয়েছে তারা, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়ে।
অথচ, আফগানরা প্রথম দুই ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হেরে
টুর্নামেন্ট শুরু করেছে। আফগান রূপকথার গল্প শেষ হতে না হতেই আরেকটি
অঘটন ঘটেছে। গতকাল সেই অঘটনের শিকার আইসিসির টুর্নামেন্টে যাদের পরিচয় ‘চোকার্স’ নামে। টুর্নামেন্টে উড়তে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাটিতে নামিয়েছে নেদারল্যান্ডস।
প্রোটিয়াদের
৩৮ রানে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে নেদারল্যান্ডস। প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর স্বাদ পেল তারা। টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য
আগেই হারিয়েছিল। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে
অ্যাডিলেডে ১৩ রানে হারে
প্রোটিয়ারা। সেবার ডাচদের কাছে হারটি টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে দেয় কুইন্টন ডি কক-টেম্বা
বাভুমাদের।
এবারের
হারটি প্রোটিয়াদের বুকে কতটা আঘাত হানবে সেটি সময়ই বলবে। শুরুর ২ ম্যাচে জিতে
এখন পর্যন্ত পয়েন্ট তালিকায় বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বাভুমার দল। আঘাতের মাত্রা মাপার সময় অনেক থাকলেও টুর্নামেন্টের প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে বেড়েছে তা
বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘দৈত্য বধের’ তকমাটা দারুণভাবেই যেন গায়ে সেঁটে গেছে আফগান ও ডাচদের নামের
পাশে। সামনে যে এমন অঘটন
আরও হতে পারে তার আভাসই যেন দিয়ে রেখেছে দুই দল। এমন ঘটন-অঘটনের মাঝে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে আফগানিস্তান। জয়ের মুহূর্তটাকে আফগানরা কাজে লাগাতে পারলেও আরেকটি অঘটন হতেও পারে!
সে
যাই হোক, দুই ‘দৈত্য বধের’ এক দলকে নিয়ে
বাংলাদেশের চিন্তার কোনো কারণ নেই। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই আফগানিস্তান ৬ উইকেটে হারিয়ে
বিশ্বকাপের মিশন শুরু করেছে সাকিব আল হাসানরা। তবে
নেদারল্যান্ডসের এই অঘটন নিশ্চিতভাবেই
বাংলাদেশকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। নিজেদের দিনে কমলা রঙের জার্সিধারীরা কতটা ভয়ংকর হতে পারে তার প্রমাণ দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়েছে। ডাচদের দেওয়া ২৪৬ রানের লক্ষ্য তারা স্পর্শ করতে পারেনি। অথচ, প্রথম দুই ম্যাচে ৩১১ ও বিশ্বকাপের ইতিহাসে
সর্বোচ্চ ৪২৮ রানের ইনিংস খেলেছে প্রোটিয়ারা।
উড়তে
থাকা সেই প্রোটিয়াদের যখন মাটিতে নামিয়েছে ডাচরা তখন পারফরম্যান্স ও নানান সমস্যায়
ভুগতে থাকা বাংলাদেশকেও খুব একটা কঠিন হবে না ধরাশায়ী করা।
তাই শক্তি ও পরিসংখ্যানের বিচারে
যতই এগিয়ে থাক না কেন, প্রতিপক্ষকে
নিয়ে ভাবতেই হবে বাংলাদেশকে। তাদের বিপক্ষে জিততে হলে সাকিব-মুশফিকদের সেরাটাই দিতে হবে। নয়তো ডাচদের হারানো খুব একটা সহজ হবে না।
সর্বশেষ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। হোবার্টের ম্যাচটিতে প্রায় জিতেই যাচ্ছিল নেদারল্যান্ডস। ভাগ্য ভালো, শেষ পর্যন্ত ৯ রানে জিতেছে
বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত সব সংস্করণ মিলিয়ে
৬ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। বাংলাদেশের ৪ জয়ের বিপরীতে
ডাচদের জয় ২ টিতে।
সামনের লড়াইটি তাই নিশ্চিতভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে।
আফগানিস্তানের
বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপের
শুরুটা করলেও সর্বশেষ ২ ম্যাচে হেরেছে
সাকিব–মুশফিকেরা। এতে দেশ ছাড়ার আগে যে উদ্দেশ্য নিয়ে
ভারতে গেছে বাংলাদেশ, তাতে বেশ ধাক্কাই খেয়েছে দল। সেমিফাইনালের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করতে হবে বাংলাদেশকে। আগামীকাল সেই স্বপ্ন নিয়ে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবেন সাকিবরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন